অগস্ত্য মহাঋষি
অগস্ত্য মহাঋষি, দেবাদিদেব মহাদেবের প্রত্যক্ষ শিষ্যগণের মধ্যে অন্যতম। পূর্বকালীন তিব্বত থেকে আগত, অগস্ত্য মহাঋষি সিদ্ধাগণের মধ্যে আদি ও সর্বপ্রথম হিসেবে সম্মানিত। শ্রী বিষ্ণুর অবতার হয়গ্রীব(Hayagreeva), যখন অগস্ত্য মহাঋষিকে ললিতা সহস্রনাম শেখান তখনই সর্বপ্রথম ললিতা সহস্রনাম, এ বিশ্বে প্রকাশ পায়। অগস্ত্য মহাঋষি, সূর্য নারায়ণের উপর 'আদিত্য হৃদয়ম' ( Aditya Hrudayam) স্তোত্র রচনা করেন যা শ্রীরাম ও রাবণের যুদ্ধের পূর্বে তিনি প্রভু শ্রী রামকেও শেখান। তামিল ভাষার প্রাথমিক ব্যাকরণের মূল-ভিত অধিশায়িত হয়ে আছে তাঁর লেখা পুস্তক 'অগত্থিয়াম'(Agathiyam)এর মাধ্যমে।
অগস্ত্য মহঋষির অবদান বিবিধ ও সুবিশাল। তাঁকে যোগ-বিজ্ঞানের অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাঁর অবদানগুলি ঔষধ, জ্যোতিষ-বিদ্যা এবং নাড়ী শাস্ত্রকে(Nadi Shastra) বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে। তিনি মধ্যযুগীয় রসায়ন বিদ্যার(Alchemy) একজন বিশেষজ্ঞ। প্রভু মুরুগা(Lord Muruga) এবং অগস্ত্য মহাঋষির মধ্যে কথোপকথন অগস্ত্য-সংহিতায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। ইতিহাসে এবং অনেক পুরাণে তাঁকে আমরা দেখতে পাই। তিনি নিজে যে ঔষধি প্রস্তুত করতেন তার মধ্যে 'ভূপতি কুলিগাই'(Boopathi Kuligai) হলো সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী এক ঔষধ, যা এমনকি একজন মৃত মানুষকেও জীবন দান করতে পারে। এরকম বলা হয় যে, তিনিই কাবেরী নদীর উৎপত্তির প্রধান কারণ এবং অসুরকুলকে আটক করতে তিনি সমুদ্রের সব জল পান করে নিয়েছিলেন।
অগস্ত্য মহাঋষিকে, কালারিপাত্তু (Kalaripayattu) নামক একটি যুদ্ধবিদ্যার (Martial Art) অন্যতম স্রষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কালারিপাত্তু কেরালা এবং তামিলনাড়ুর বিভিন্ন অংশে আজও অনুশীলন করা হয়। ভারতের দক্ষিণ অংশের প্রতি অগস্ত্য মহাঋষির অবদান অভূতপূর্ব। অগস্ত্য মহাঋষি, অরুণাচল পর্বতে প্রচুর দিব্যশক্তি প্রথিতকরণ(Anchor) করেছিলেন এবং তা মহাদেবের বাসস্থান কৈলাস পর্বতের মতোই শক্তিশালী ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুরাণ মতে, দেবাদিদেব মহাদেব এবং পার্বতী দেবীর বিবাহ অনুষ্ঠানের দিন মহাদেব, অগস্ত্য মহাঋষিকে ভারতের দক্ষিণে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন । যদিও তিনি ৬৪ সিদ্ধির সবগুলিতেই পারদর্শী ছিলেন তবুও তিনি উত্তরদিক থেকে দক্ষিণে পদব্রজে যাওয়াকেই বেছে নিয়েছিলেন এবং যাওয়ার পথে তিনি অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। লিখিত আছে যে, অগস্ত্য মহর্ষি তাঁর যাত্রাপথে বিন্ধ্য পর্বতকে দমিত করেছিলেন কারণ বিন্ধ্য পর্বত, ঈর্ষাবশত হিমালয় পর্বতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিজেকে উচ্চতায় বৃদ্ধি করতে থাকে। এরপর মহর্ষির সঙ্গে বিন্ধ্য পর্বতের একটি চুক্তি হয় যে, যতদিন না অগস্ত্য মহর্ষি উত্তরে ফিরে আসবেন, ততদিন পর্যন্ত বিন্ধ্য পর্বত আর নিজেকে উচ্চতায় বৃদ্ধি করবে না। এই চুক্তি বিন্ধ্য পর্বত মাথা নত করে মেনে নিয়েছে এবং আজও তা পালন করে চলেছে। অগস্ত্য মহাঋষি তাঁর অসীম শক্তির সাহায্যে নিজের উচ্চতা বৃদ্ধি করে বিন্ধ্য পর্বতের সমান হয়ে , বিন্ধ্য পর্বতের উপরের অংশটি কেটে ছোট করে দেন এবং উপরের কেটে যাওয়া টুকরোটি তিনি দক্ষিণ ভারতে নিয়ে আসেন এবং তিরুভান্নামালাই(Tiruvanamalai) পর্বতে রাখেন।
অগস্ত্য মহাঋষিকে, কালারিপাত্তু (Kalaripayattu) নামক একটি যুদ্ধবিদ্যার (Martial Art) অন্যতম স্রষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কালারিপাত্তু কেরালা এবং তামিলনাড়ুর বিভিন্ন অংশে আজও অনুশীলন করা হয়। ভারতের দক্ষিণ অংশের প্রতি অগস্ত্য মহাঋষির অবদান অভূতপূর্ব। অগস্ত্য মহাঋষি, অরুণাচল পর্বতে প্রচুর দিব্যশক্তি প্রথিতকরণ(Anchor) করেছিলেন এবং তা মহাদেবের বাসস্থান কৈলাস পর্বতের মতোই শক্তিশালী ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বিশ্বাস করা হয় যে, অগস্ত্য মহর্ষিই, মহাবতার বাবাজীকে 'সিদ্ধা' এবং 'ক্রিয়া'র শিক্ষা দান করেছিলেন। তিরুমুলারের (Thirumoolar) গুরুগণের মধ্যে একজন গুরু হিসাবে অগস্ত্য মহাঋষিকে বিবেচনা করা হয়। অগস্ত্য মহাঋষি এইরকমই এক মহান ঋষি যাঁকে উচ্চতায় খর্বকায় মনে হলেও তাঁর অবদান মহৎ ও অসামান্য।
আমাদের অনুসরণ করুন
সমস্ত কোটেশন দেখতে ...