ধ্যান
ধ্যান হল দেহ, মন এবং বিজ্ঞানময়সত্তাকে নীরব করার একটি অভ্যন্তরীণ অনুশীলন এবং প্রণালী। এটি কার্যকরী দৈহিক স্থিরতা, মনঃসংযোগ এবং দৃশ্যায়ন প্রক্রিয়ার (visualisation) সম্মিলিত ফলাফল। ধ্যান হল অষ্টাঙ্গ যোগের সপ্তম অঙ্গ।
মহাঋষিগণের দ্বারা প্রবর্তিত ধ্যানের অনুশীলন একটি সুপ্রাচীন এবং প্রগতিশীল আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান, যা কর্মফল পুড়িয়ে দিয়ে ক্রমাগত আমাদের রূপান্তরিত করে ও আত্ম-সাক্ষাৎকারের দিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। ধ্যান, ভারসাম্যপূর্ণ একটি জীবন অতিবাহিত করতে সাহায্য করে এবং পরিণতিতে মোক্ষ বা পরম মুক্তির পথ প্রশস্ত করে।
ধ্যানের মধ্যে দিয়ে বাইরের জগতের প্রতি নিরাসক্ত হয়ে আমরা বর্তমান মুহূর্তের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ স্থাপন করি। শুধু তাই নয়, ধ্যান করলে আমাদের চেতনা যাবতীয় চিন্তাভাবনা ও ইন্দ্রিয় অনুভূতির অনেক উপরে উঠতে সক্ষম হয়।
পড়তে থাকুন ...ধ্যান করার সময় আমরা সচেতন ভাবে চেষ্টা করি আমাদের চেতনাকে চিন্তাভাবনার স্তর থেকে অনুভূতি এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে। যখনই আমরা শক্তির অভিজ্ঞতা লাভ করতে আরম্ভ করি, তখন থেকেই আমাদের নিশ্চলতা আরও গভীর হয়, আমাদের চেতনা প্রসারিত হয়, আমরা সকলের সঙ্গে একাত্মতা (Oneness) অর্জন করি এবং দিব্য-আলো, যেমন ভাবে আছে, তাকে সেভাবেই প্রত্যক্ষ করি।
ধ্যান, আমাদের মধ্যেকার অসংখ্য আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলার মাধ্যমে আমাদের সমগ্র জৈব-রাসায়নিক প্রণালীতেই আলোড়ন ফেলে দেয়। আমাদের দেহ মহাজাগতিক শক্তি-তরঙ্গকে গ্রহণ করার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এর ফলে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন যেমন সমৃদ্ধ হয়, তেমনি সমগ্র মানব বিবর্তনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, জৈবিক বিবর্তন ও আধ্যাত্মিক বিবর্তন দুই ভাবেই।
ধ্যানের মধ্যে দিয়ে যে দিব্যতরঙ্গ লাভ করা যায়, তা কেবল আমাদেরই পরিবর্তিত করে না, আমাদের সঙ্গে সঙ্গে তা আমাদের পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশী, আমাদের চারপাশকে এবং সারা পৃথিবীকেই গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ধ্যানের মাধ্যমে আমরা নিজেরাই ঈশ্বরের উপযুক্ত মাধ্যম হয়ে উঠতে পারি। ধ্যান আমাদের মধ্যে আলোকের সমস্ত সত্যতাকে জাগিয়ে তোলে। এর ফলে আমাদের জীবন আরও সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ধ্যান এবং ইতিবাচকরণ বা শুভায়ন প্রক্রিয়া পরস্পর সম্পর্কযুক্ত- উভয়েই একে অন্যের সাহায্যকারী ও পরিপূরক। ধ্যান আমাদের ভিতরের শক্তি এবং ইচ্ছা প্রদান করে, যাতে আমরা শুভায়ন প্রক্রিয়াকে বজায় রাখতে পারি, বিশেষ করে যখন জীবন আমাদের পরীক্ষা নেয় এবং আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে পার হই। অপরদিকে, শুভায়ন বা ইতিবাচককরণ প্রক্রিয়া আমাদের সাহায্য করে ধ্যানের গুণগতমানকে বাড়াতে এবং সহজেই সমাধি অবস্থা পেতে। মনে রাখতে হবে, ধ্যান এবং ইতিবাচককরণের সম্মিলিত প্রয়াসেই আমরা আমাদের মধ্যে থেকে ষড়রিপু বা Arisadvargas নির্মূল করতে পারি।
ইতিবাচককরণের অভ্যাস আমাদের মধ্যে সাত্ত্বিকগুণ বাড়িয়ে তোলে, তেমনি ধ্যানের অভ্যাস আমাদের সকল প্রকার গুণের অতীত হতেও সাহায্য করে এবং আমাদের মোক্ষ বা পরম মুক্তির পথে অগ্রসর করে দেয়। সুতরাং, ধ্যান এবং ইতিবাচককরণ একসাথেই অভ্যাস করা উচিত এবং সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এই দুটি যেন সাধনার দুটি চক্ষু, যা আমাদের আধ্যাত্মিক এবং বস্তুগত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণতা এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনদৃষ্টি প্রদান করে।
ধ্যান করার সময় আমরা সচেতন ভাবে চেষ্টা করি আমাদের চেতনাকে চিন্তাভাবনার স্তর থেকে অনুভূতি এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে। যখনই আমরা শক্তির অভিজ্ঞতা লাভ করতে আরম্ভ করি, তখন থেকেই আমাদের নিশ্চলতা আরও গভীর হয়, আমাদের চেতনা প্রসারিত হয়, আমরা সকলের সঙ্গে একাত্মতা (Oneness) অর্জন করি এবং দিব্য-আলো, যেমন ভাবে আছে, তাকে সেভাবেই প্রত্যক্ষ করি।
দৈহিক উপকারিতা:
✔ ধ্যানের নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্ন অভ্যাস যে উপকারগুলি দান করে-
✔ ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, রাগ এবং মানসিক চাপ মুক্ত করে।
✔ রোগ নিরাময় ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে জীবনের গুণগত মান বৃদ্ধি করে।
✔ মন শান্ত করে, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
✔ মনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে, বিচক্ষণতার গুণকে বাড়িয়ে বৌদ্ধিক স্তরকে সমৃদ্ধ করে এবং দেহকে প্রাণময় করে তোলে।
✔ সৃজনশীলতা এবং মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করে।
✔ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং দিনভর আমাদের তরতাজা ও উদ্দীপিত থাকতে সাহায্য করে।
✔ দেহের গ্রন্থিগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে সক্রিয় করে তোলে।
✔ মস্তিষ্কের ঘুমন্ত কোষগুলিকে সক্রিয় করে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে ক্ষুরধার করে তোলে।
✔ সুখ, শান্তি এবং সন্তুষ্টি প্রদান করে।
✔ চিন্তার পরিমান কমাতে এবং ধ্যানের সময় চিন্তার হার কমাতে সাহায্য করে।
আধ্যাত্মিক উপকারিতা:
✔ ধ্যানের নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্ন অভ্যাস যে উপকারগুলি দান করে-
✔ নিঃস্বার্থ প্রেম এবং আনন্দকে আত্মা থেকে উৎসারিত হতে সাহায্য করে।
✔ রূপান্তরিত করে এবং ইতিবাচক করে।
✔ জীবনের উচ্চতর উদ্দেশ্যের প্রতি আমাদের জাগিয়ে তোলে।
✔ নিশ্চল স্থিরতা এবং মনের শান্তি বৃদ্ধি করে।
✔ সর্বস্তরে পবিত্রতা যুক্ত করে।
✔ সজাগ-সতর্কতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
✔ অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং জীবনের বিভিন্ন অবস্থাকে মোকাবিলা করতে পর্যাপ্ত মানসিক পরিণতি দান করে।
✔ দেহস্থ চক্রগুলিকে নির্মল করে ও সক্রিয় করে তোলে এবং মহাজাগতিক শক্তি-ভান্ডারের সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করে।
✔ প্রাণময় কোষগুলিকে শক্তিশালী করে এবং নাড়িসমূহ সচল করে।
✔ সুপ্ত গুণাবলীগুলিকে জাগিয়ে তোলে যেমন সজ্ঞা (Intuition), টেলিপ্যাথি, ভবিষ্যত দর্শন কিংবা অতীন্দ্রিয় অনুভবের বিশেষ ক্ষমতা ( Clairvoyance)।
✔ ঈশ্বর এবং মহাঋষিগণের সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।
✔ সাধনার সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা -'সমাধি' অর্জন করতে সাহায্য করে।
✔ মানব জীবনের পরম উদ্দেশ্য- মুক্তি লাভ করতে সহায়তা করে।
✔ যেকোনো চরমপন্থাকে এড়িয়ে, জীবনে বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক বা পারমার্থিক ক্ষেত্রে ভারসাম্য নিয়ে আসে।
আমাদের অনুসরণ করুন
সমস্ত কোটেশন দেখতে ...