মায়া
◘ মায়া , সমগ্র সৃষ্টিকে আবৃত করে থাকা বস্তু বা বিষয়।
◘আত্মা যখন মনের সাহায্যে মায়ার মধ্যে দিয়ে দেখে, তখন সমগ্র জগৎ প্রতিফলিত হয় এবং দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। ঠিক যেভাবে প্রোজেক্টরের সাহায্যে পর্দার উপর একটি চলচ্চিত্র ফুটে ওঠে, অনেকটা ঠিক সেইভাবেই মনকে ব্যবহার করে জগৎ আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়।
◘মায়া একটি পর্দার মতো কাজ করে এবং আলোরূপ সত্য মায়ার আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকে।
◘মায়ার উদ্দেশ্য হল সৃষ্টির মধ্যে বৈচিত্র্য বজায় রাখা। মায়া ব্যতীত সবই এক আলোকসত্তা এবং তাতে কোনো বৈচিত্র্য নেই ।
◘মায়া অথবা জগৎ হল একটি ধারণাগত সত্য এবং সময়ের দ্বারা আবদ্ধ, যেখানে আলো প্রকৃত সত্য বা চরম সত্য এবং তা সময়ের অতীত।
◘যা মায়াজাত তা জন্ম, পালন এবং ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়, যেখানে আলোক হল চিরন্তন এবং অপরিবর্তনীয় একটি সত্য।
◘আত্ম সাক্ষাৎকার লাভের আগে মায়াকেই সত্য বলে বোধ হয় এবং আলো অসত্য বলে মনে হয়। আত্মোপলব্ধির পর এবং আলোক সাক্ষাতের পর মায়াকে অসত্য বলে প্রতিভাত হয়। যাঁরা আত্মোপলব্ধি করেছেন, তাঁরা মায়াকে ভ্রান্তি বলেন।
গুণ
◘মায়ার তিনটি প্রধান উপাদান হলো গুণ বা ত্রিগুণ। এগুলি হল সত্ত্ব, রজঃ এবং তমঃ।
◘এই তিনটি গুণ সম্পূর্ণ সৃষ্টির সমস্ত ব্যক্তি ও বিষয়ের মধ্যেই উপস্থিত, কিন্তু এগুলি উপস্থিত রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংযুতি এবং অনুপাতে।
◘ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ও বস্তুতে এই ত্রিগুণের উপস্থিতির বিভিন্নতাই প্রকৃতপক্ষে বৈচিত্রের পিছনে থাকা কারণ। ঠিক যেভাবে লাল, সবুজ এবং নীল এই তিনটি প্রাথমিক রঙের ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণের সংযুতিতে অসংখ্য রঙের সৃষ্টি হয়।
◘সত্ত্বগুণ বলতে বোঝায় জ্ঞান, ভারসাম্য,সম্প্রীতি, নির্মলতা, সৃষ্টিশীলতা, ইতিবাচকতা, শান্তি এবং সদগুণ।
◘রজঃ গুণ হল আবেগ, সক্রিয়তা এবং আত্মকেন্দ্রিকতা।
◘তামসিক গুণ বলতে ভারসাম্যহীন এলোমেলা বা অগোছালো ভাবকে বোঝায়, সেইসঙ্গে রাগ, বুদ্ধিহীন বা ভোঁতা স্বভাব, অলসতা, হিংস্রতা, অজ্ঞানতা বা মূর্খতা, সব কাজে বিলম্বতা কিংবা স্থগিত করার মানসিকতা এবং তোয়াক্কাহীন মনোভাবকে বোঝায়।
◘কোনো ব্যক্তি বা বিষয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে এই ত্রিগুণের সমষ্টিগত প্রভাবের সাপেক্ষে দেখা হয়। সুতরাং, গুণ আমাদের ব্যবহার এবং সেই অনুযায়ী আমাদের জীবনের পরিস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
◘যেহেতু, জ্যোতি (Light) মায়ার দ্বারা প্রভাবিত নয়, তাই জ্যোতি হল নির্গুণ অর্থাৎ গুণহীন।
একাত্মতা
◘একাত্মতা হল বিশ্বের সমস্ত কিছুর মধ্যে এক বিশেষ যোগসূত্র । এই যোগসূত্র আত্মার সঙ্গে আত্মার, হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের।
◘একাত্মতা হল, সৃষ্টির সামূহিক বৈচিত্র্যের মধ্যে এক ও অভিন্ন আলোকময় সত্তাকে দেখতে পাওয়া।
◘একাত্মতা হল এই উপলব্ধি যে, বিশ্বের সকল প্রাণী এবং অপ্রাণিবাচক ব্যক্তি এবং বস্তু একই উৎস আলো থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
◘একাত্মতার অনুভবের দ্বারা আমরা মায়ার অতীত হই।
◘একাত্মতা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করে।
◘একাত্মতা হল আমাদের সাধনার প্রত্যেকটি স্তরের মধ্যে সমরৈখিক (aligned) হয়ে বাঁচা; এই প্রতিটি স্তর হল- শারীরিক, মানসিক, মননময়, আবেগময় এবং আধ্যাত্মিক। এইরূপ একাত্মতাই যোগের (Yoga) কারণ।
আমাদের অনুসরণ করুন
সমস্ত কোটেশন দেখতে ...