প্রাণায়াম
প্রাণ হল সূক্ষ্ম মহাজাগতিক শক্তিপুঞ্জ, যা সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে উপস্থিত। শ্বাসগ্রহণের সময় আমরা আমাদের সূর্য থেকে প্রাণশক্তি লাভ করি। শ্বাস-প্রশ্বাস হল জীবিত থাকার প্রমাণ এবং জীবনের প্রধান উৎস। প্রাণায়াম হল শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি। এটি অষ্টাঙ্গ যোগের চতুর্থ অঙ্গ।
প্রশ্বাসের সঙ্গে আমরা যে শ্বাস গ্রহণ করি, তা পাঁচটি প্রাণে ভাগ হয়ে যায়, এই পাঁচটি প্রাণকে বলা হয় পঞ্চপ্রাণ। এগুলি হল প্রাণ (Prana), অপান (Apana), সমানা (Samana), ব্যানা (Vyana) এবং উদান (Udhana)।
আমাদের দেহতন্ত্রের মধ্যে অবস্থিত অতি সরু শক্তিবাহী নাড়ির মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে প্রাণ প্রবাহিত হয়ে থাকে। প্রাণময় কোষ অথবা Vital Body, এইসমস্ত নাড়িসমূহ থেকে প্রাণশক্তি গ্রহণ করে। আমাদের দেহে ৭২ হাজার নাড়ি রয়েছে এবং তার মধ্যে ১০১ টি প্রধান নাড়ি এবং অন্যান্যগুলি হল ক্ষুদ্র নাড়ি।
তিনটি মূল নাড়ি, যা আমাদের শরীরে মেরুদন্ডের ভিত্তি বা মূলাধার থেকে সুষুম্নার মধ্যে দিয়ে মস্তক পর্যন্ত বিস্তৃত, এর মধ্যে বাম দিকে রয়েছে ইড়া নাড়ি (Ida), মধ্যস্থলে রয়েছে সুষুম্না (Sushumna) যা মেরুদণ্ড ও সপ্তচক্রের মধ্যে দিয়ে গেছে এবং ডানদিকে রয়েছে পিঙ্গলা নাড়ি (Pingala)।
প্রাণায়ামের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হল এই নাড়িগুলিকে মুক্ত করা এবং এর সাহায্যে নাড়ির মধ্যে যে সুপ্ত শক্তি রয়েছে, তাকে সক্রিয় করে তোলা। এভাবে সুপ্তশক্তি সক্রিয় করে তোলার মধ্যে দিয়ে উচ্চতর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করা সম্ভব হয় এবং ক্রমশ তা আত্মসাক্ষাৎকারের পথে আমাদের অগ্রসর করে।
প্রাণায়ামের লক্ষ্য হল আমাদের প্রাণময় কোষের পূর্ণ সক্রিয়তা অর্জন করে সঠিকভাবে তাকে কার্যকরী করতে সাহায্য করা, যাতে আমাদের শরীরের নাড়িগুলি পর্যাপ্তমাত্রায় প্রাণশক্তি ধারণ করতে পারে ও দেহের মোট ৭২,০০০ নাড়ি পরিষ্কৃত ও পরিশুদ্ধ হতে পারে।
প্রাণায়ামের মধ্যে রয়েছে শ্বাসগ্রহণ, শ্বাসত্যাগ এবং শ্বাস-ধারণ । শ্বাস-ধারণ অবস্থায় বক্ষদেশ একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের কাজ করে এবং ফুসফুসে পুনর্গৃহীত শক্তির যোগান দেওয়ার মাধ্যমে একটি শক্তি-উৎপাদক যন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
এই উৎপাদিত শক্তিপুঞ্জ দেহস্থ চক্রসমূহের মধ্যে সঞ্চিত হয়ে থাকে। চক্রগুলি রূপান্তরক (Transformer) হিসেবে কাজ করে, যা সমগ্র দেহের অংশবিশেষে শক্তি বন্টন করে থাকে।
তিনটি মূল নাড়ি, যা আমাদের শরীরে মেরুদন্ডের ভিত্তি বা মূলাধার থেকে সুষুম্নার মধ্যে দিয়ে মস্তক পর্যন্ত বিস্তৃত, এর মধ্যে বাম দিকে রয়েছে ইড়া নাড়ি (Ida), মধ্যস্থলে রয়েছে সুষুম্না (Sushumna) যা মেরুদণ্ড ও সপ্তচক্রের মধ্যে দিয়ে গেছে এবং ডানদিকে রয়েছে পিঙ্গলা নাড়ি (Pingala)। প্রাণায়ামের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হল এই নাড়িগুলিকে মুক্ত করা এবং এর সাহায্যে নাড়ির মধ্যে যে সুপ্ত শক্তি রয়েছে, তাকে সক্রিয় করে তোলা। এভাবে সুপ্তশক্তি সক্রিয় করে তোলার মধ্যে দিয়ে উচ্চতর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করা সম্ভব হয় এবং ক্রমশ তা আত্মসাক্ষাৎকারের পথে আমাদের অগ্রসর করে।
প্রাণায়াম | অনুশীলন
উভয় নাসারন্ধ্র দ্বারা শ্বাসবায়ু (প্রাণ) গ্রহণ করুন এবং শ্বাস গ্রহণের সঙ্গেই আলোকশক্তি (সাদা অথবা সোনালী) গ্রহণ করছেন, এমনটি মনে মনে দেখার চেষ্টা করুন (Visualisation)।
শ্বাস ধরে রাখুন। এভাবে শ্বাস ধরে রাখার সময় প্রাণ এবং আলোক শক্তিকে দেহের প্রতিটি কোষে এবং পঞ্চকোষের প্রতিটিতে ছড়িয়ে দিন এবং সেই আলোককে সমগ্র দেহতন্ত্রে উপলব্ধি করুন। নিজের সুবিধামতো শ্বাস ধরে রাখুন।
এবার সম্পূর্ণভাবে শ্বাসবায়ু (প্রাণ) বিমুক্ত করুন।
পুনরায় শ্বাস ধরে রাখুন। দু নম্বর পদ্ধতিটিতে যেমন বলা হয়েছে সেইমত একই সময় ধরে পুনরায় ঐ প্রক্রিয়া অভ্যাস করুন।
উপরের চারটি পদক্ষেপ একটি বৃত্ত (1 Round) সম্পূর্ণ করে। সবকটি পদক্ষেপ যেন একই পরিমাণ সময় ধরেই অনুশীলিত হয়, সেইদিকে খেয়াল রাখবেন। খাদ্যগ্রহণ করে প্রাণায়াম করবেন না অথবা পর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের পর অন্তত কমপক্ষে ২ঘন্টার ব্যবধান রেখে তারপর প্রাণায়াম অভ্যাস করা যেতে পারে- এই দিকগুলি বিশেষভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
কে
✔ ৮ বছরের ঊর্ধে যে-কেউ।
কোথায়
✔ ঘরের ভিতরে অথবা বাইরে।
কখন
✔ দিনের যেকোনো সময়, তবে ভোরবেলায় করা সবচেয়ে ভালো।
কতক্ষণ
✔ কমপক্ষে ৫ মিনিট।
উপকারিতা
✔ প্রাণায়ামের নিয়মিত অভ্যাস আমাদের নিম্নলিখিত শারীরবৃত্তীয়, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উপকার প্রদান করে:
✔ সামগ্রিক স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে এবং জীবনের গুণগত মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
✔ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
✔ আমাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে অক্সিজেন গ্রহণের এবং শক্তির স্তরকে বাড়াতে সহায়তা করে।
✔ স্নায়বিক বৈকল্য দূর করে।
✔ দীর্ঘায়ু হতে এবং প্রাণশক্তির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
✔ রাগ এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
✔ ক্লান্তি , দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে।
✔ নিদ্রার গুণগত মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
✔ মনে শান্ত ভাব, প্রাণে আরাম নিয়ে আসে এবং সেইসঙ্গে আভ্যন্তরীণ সতর্কতার অনুভূতিকে তীক্ষ্ণ করে তোলে।
✔ খুব দ্রুত মনকে স্থির অবস্থায় নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
✔ চিন্তার পরিমান কমাতে এবং ধ্যানের সময় চিন্তার হার কমাতে সাহায্য করে।
✔ সমগ্র নাড়ী পদ্ধতিকে পরিষ্কৃত এবং পরিশুদ্ধ করে।
✔ নাড়ীপ্রণালীকে শক্তিশালী হতে এবং পঞ্চকোষের সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
✔ আমাদের মধ্যে থাকা সুপ্ত ক্ষমতাগুলিকে চালনা করে যেমন আমাদের সজ্ঞা (Intuition)।
✔ আরো দৃঢ়ভাবে ঈশ্বর সংযুক্তিতে সাহায্য করে।
✔ মানব জীবনের পরম লক্ষ্য আত্ম-সাক্ষাৎকার লাভ করতে সহায়তা করে।
নির্দেশিকা
✔ মাদুরের উপর আরামদায়ক আসনে সোজা হয়ে বসুন।
✔ এটি নিশ্চিত করুন, যেন আপনার মেরুদন্ডটি সোজা থাকে এবং আপনার চিবুক ভূমির সঙ্গে সমান্তরালে থাকে।
✔ আপনার মুখমণ্ডল, দুই কাঁধ এবং সমগ্র দেহটি বিশ্রামরত অবস্থায় রাখুন।
✔ খুব ধীরে ধীরে শ্বাস-গ্রহণ ও শ্বাস-ত্যাগ করুন।
✔ খেয়াল রাখবেন ও নিশ্চিত করবেন, যেন প্রাণায়াম অনুশীলনের প্রতিটি পদক্ষেপ যথা শ্বাসগ্রহণ, শ্বাস-ধারণ ও শ্বাসত্যাগ একই পরিমাণ সময় বজায় রেখে অনুশীলিত হতে পারে।
✔ আরামদায়ক অবস্থায় প্রাণায়াম অভ্যাস করবেন, কোনোকিছুর দ্বারা বাধ্য হয়ে অথবা জোর করে এই প্রক্রিয়া অভ্যাস করবেন না।
আমাদের অনুসরণ করুন
সমস্ত কোটেশন দেখতে ...