পতঞ্জলি মহাঋষি | অষ্টাঙ্গ যোগ | ব্রহ্মঋষি হারমিটেজ

পতঞ্জলি মহাঋষি


Brahmarishis Hermitage Devatmananda Shamballa Rishis Siddhas Siddhar Sprituality Kalki Saptharishis Saptarishis
                    Divine Soul Guru Wisdom Positive Quotes

পতঞ্জলি মহর্ষি দ্বিতীয় শতাব্দীর এক মহান ঋষি।সর্প-দেবতা আদি-শেষ(Adi Sesha) পতঞ্জলি মহাঋষি রূপে জন্ম নিয়েছিলেন।

যোগ-সূত্র'(Yoga Sutras)-এর অমর অবদানের জন্য পতঞ্জলি মহাঋষিকে 'যোগ-পিতা'(Father Of Yoga) হিসেবে পূজা করা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম যিনি যোগ এবং ধ্যানের জ্ঞানকে 'যোগ-সূত্র' হিসেবে পৃথিবীতে এনেছিলেন। যোগ-সূত্রকে বর্তমান সময়ে যোগের একটি শাস্ত্রীয় গ্রন্থ হিসেবেই মান্য করা হয়।এটি এমন একটি প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ যা সর্বাধিক সংখ্যায় ভাষান্তরিত হয়েছে। তিনি বিশুদ্ধ এবং সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞান হিসেবে যোগকে সংশ্লেষিত করেছেন। তিনি ব্যাকরণ এবং ঔষধির উপরেও গ্রন্থসমূহ লিখেছেন।

১৮ জন সিদ্ধার (Siddhas) মধ্যে পতঞ্জলি মহাঋষিকে একজন সিদ্ধা হিসেবে পরিগণিত করা হয়। তিরুমুলার(Thirumoolar) সিদ্ধার শ্রেষ্ঠ অবদান, 'তিরুমনধীরম'(Thirumandhiram)- যেখানে বলা হয়েছে, এক মহান সিদ্ধা নন্দিকেশ্বর-এর কাছেই পতঞ্জলি মহাঋষি যোগ শিক্ষা অর্জন করেছেন।

গত দশকে ইন্টারনেট প্রচার মাধ্যমে বহুল অনুসন্ধান হয়েছে এমন একটি বিষয় হল 'যোগ' এবং বহু পর্যটক তাদের পছন্দের আধ্যাত্মিক গন্তব্যস্থল হিসেবে ভারতবর্ষকেই নির্বাচিত করেছেন। যোগের মধ্যে যে বিজ্ঞান আছে এবং যোগ যে ধরনের স্বচ্ছতা প্রদান করে, তা সকল মানুষকে আকর্ষণ করে।

এই আধুনিক যুগের যে কোন অসুস্থতা তা সে শারীরিক বা মানসিক যাই হোক না কেন, যোগের মাধ্যমেই আমরা তার প্রতিকার পাই।যোগ, মানব জীবনের উন্নতির সকল মাত্রাকেই স্পর্শ করতে পারে। যোগের মাধ্যমে আমরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাই, তা শুধুমাত্র শারীরিক এবং মানসিক মঙ্গলসাধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। নিজেকে বা স্বয়ংকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে যোগের সম্পূর্ণ সারমর্ম অনুভব করার একটি সচেতন প্রচেষ্টার দ্বারা আমরা সঠিকভাবে এই মহান ঋষিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারি।

এই আধুনিক যুগের যে কোন অসুস্থতা তা সে শারীরিক বা মানসিক যাই হোক না কেন, যোগের মাধ্যমেই আমরা তার প্রতিকার পাই।যোগ, মানব জীবনের উন্নতির সকল মাত্রাকেই স্পর্শ করতে পারে। যোগের মাধ্যমে আমরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাই, তা শুধুমাত্র শারীরিক এবং মানসিক মঙ্গলসাধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। নিজেকে বা স্বয়ংকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে যোগের সম্পূর্ণ সারমর্ম অনুভব করার একটি সচেতন প্রচেষ্টার দ্বারা আমরা সঠিকভাবে এই মহান ঋষিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারি।

অষ্টাঙ্গ যোগ


পতঞ্জলি মহর্ষি তাঁর যোগ-সূত্রকে সংস্কৃততে চারটি অধ্যায় অথবা পদতে বিভক্ত করেছেন।এগুলি হল - সমাধি পদ, সাধনা পদ, বিভূতি পদ এবং কৈবল্য পদ।

আত্ম-সাক্ষাৎকার অর্জন করতে সাধনা পদতে অষ্টাঙ্গ যোগের বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে ধাপে ধাপে আটটি পথের উল্লেখ করা হয়েছে। এর আটটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বা উপাদানগুলি হল - যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান এবং সমাধি।


অষ্টাঙ্গ যোগের আটটি অঙ্গ

প্রতিটি বিষয় পড়তে এখানে ক্লিক করুন

যম হল আত্ম-সংযমের কিছু শৃঙ্খলা। এ বিশ্বের যেখানে সামাজিক আদান-প্রদান করা হয়, সেই স্থানেই একমাত্র এই অনুশীলনটি করা যায়। এগুলি হল 'বিশ্বজনীন নির্দেশিকা'(Universal Guidelines) এবং এগুলি যে কোন স্থানে, যে কোনো সময় ও যে কোন অবস্থায় অনুশীলন করা যায়। এই পাঁচটি নির্ধারিত যম

অহিংসা
অহিংসা বা হিংসা না করা হল, আমাদের চিন্তা, কথা এবং কাজে সম্পূর্ণভাবে হিংসার অনুপস্থিতি। অহিংসা বলতে, নিজের উপরে অথবা অন্যের উপরে কঠোর না হওয়াও বোঝায়।

সত্য
সত্য বা সত্যবাদিতা বলতে বোঝায় জীবনের যে কোনো অবস্থাতেই সত্য আচরণ করা। সকল রকম মিথ্যাচার পরিহার করাও বোঝায়।

অস্তেয়
অস্তেয় বা চুরি না করা হল, সকল রকম চুরি অর্থাৎ যে কোন জিনিস চুরি, সম্পর্ক চুরি, জ্ঞান চুরি অথবা কোন ধারণা চুরি ইত্যাদি রকম চুরি থেকে নিজেকে সংযত করে রাখা।

ব্রহ্মচর্য
ব্রহ্মচর্য অর্থে ঐশ্বরিক মেলবন্ধনে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখাকে বোঝায়। ব্রহ্মচর্য বলতে, শুদ্ধতা রক্ষা করা এবং যৌন সংযম করাকেও বোঝায়।

অপরিগ্রহ
অপরিগ্রহ বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায়,যে অবস্থায় আমরা লোভ করা থেকে, আধিপত্যমূলক প্রবণতা থেকে এবং গোপনে কিছু মজুদ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখি।

নিয়ম হল ব্যক্তি-নির্ভর নির্দেশিকা।পাঁচটি নির্ধারিত নিয়ম

শৌচ
শৌচ বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিজের ভিতরের অথবা বাইরের উভয় প্রকার পরিশুদ্ধতাকেই বোঝায়। বাইরের পরিশুদ্ধতা বলতে নিজের শরীর ও চারপাশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ভিতরের পরিশুদ্ধতা বলতে নিজের চিন্তা এবং আবেগকে পরিশুদ্ধ রাখা বোঝায়।

সন্তোষ
সন্তোষ বলতে, শান্তিপূর্ণ মন এবং পরিতৃপ্তি থেকে পাওয়া আনন্দ ও সুখকে বোঝানো হয়েছে।

তপস্যা
তপস্যা হল সুনিবিড় ধ্যান। তপস্যা আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে। দৈহিক কৃচ্ছ্বসাধনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়গণকে নিয়ন্ত্রণ করাই হল বাহ্যিক তপস্যা।বিশৃঙ্খলার মধ্যেও নিজেকে শান্ত রাখা, অধ্যাবসায় বজায় রাখা এবং ত্যাগ স্বীকার হল আভ্যন্তরীণ তপস্যা। শারীরিক এবং মানসিক তপস্যা একে অন্যকে সাহায্য করে।

স্বধ্যায়
স্বধ্যায় বলতে স্ব-শিক্ষাকে বোঝায়। এটি শুধুমাত্র কিছু পবিত্র গ্রন্থ শিক্ষা করাই নয় বরং নিজের আচরণকে সর্ব সময় পর্যবেক্ষণ করা এবং মনের সচেতন ও অবচেতন প্রক্রিয়া এবং আবেগ ও প্রেরণা পর্যবেক্ষণ করাও স্বধ্যায়ের অন্তর্গত।

ঈশ্বরপ্রণিধান
ঈশ্বরপ্রণিধান হল ঈশ্বর, ঋষি অথবা গুরুর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। এটি হল, আমরা যে কাজ করেছি, সেই কর্মফলকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে সম্পূর্ণভাবে স্বীকার করে নেওয়া।

আসন কথাটির অর্থ দৃঢ় এবং আরামদায়ক অবস্থায় বসা।

প্রাণায়াম এবং ধ্যানের জন্য আসন অত্যাবশ্যক। দৃঢ় ধ্যানস্থ দেহ-ভঙ্গি ছাড়া শারীরিক স্থিরতা অর্জন করা সম্ভব নয় এবং স্থিরতা ছাড়া মনের একাগ্রতা এবং সংযমও সম্ভব নয়।

যোগাসন হল, একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া এবং সচেতনতার সঙ্গে করা কিছু শারীরিক ব্যায়াম। এর সাহায্যে শরীর নমনীয় এবং শক্তিশালী হয়।

এই সমগ্র মহাবিশ্বে যে সূক্ষ্ম মহাজাগতিক শক্তি বর্তমান আছে তাই হল প্রাণ(Prana)। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে সূর্য থেকে আমরা এই প্রাণশক্তি গ্রহণ করি। আমরা যে বেঁচে আছি, তার একটি প্রধান উৎস এবং প্রমাণ হল আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস। প্রাণায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

প্রাণায়াম করার মাধ্যমে সূক্ষ্ম প্রাণশক্তি আমাদের কোষের ভিতরে ঢুকে যায় এবং শরীর, মন ও বিজ্ঞানময়সত্তাকে পরিশুদ্ধ করে দেয়।

প্রাণায়াম, আরো বেশি প্রাণশক্তি আত্তীকরণ করতে সাহায্য করে। প্রাণায়াম প্রশ্বাস, নিঃশ্বাস ও ধারণ নিয়ে গঠিত হয়। ধারণ করার সময় বক্ষস্থল চৌম্বক ক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং আকর্ষিত শক্তি ফুসফুসে প্রেরণ করে, যা একটি শক্তি উৎপাদক যন্ত্র হিসেবে কাজ করে। এইভাবে উৎপন্ন শক্তি আমাদের চক্রগুলিতে সঞ্চিত হয়ে থাকে। এই চক্রগুলি এক-একটি পরিবর্তনকারী যন্ত্র (Transformers) হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে এই শক্তিকে বিতরণ করে দেয়। এই পদ্ধতি আমাদের বহু বছর বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।

যেখানে আসন হল আমাদের স্থুল শরীরের জন্য সেখানে প্রাণায়াম হল আমাদের সূক্ষ্ম শরীরের জন্য। প্রাণায়ামের নিয়মিত অনুশীলনের দ্বারা আমাদের নাড়ী-ব্যবস্থা(Nadi System) এবং পঞ্চকোষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর সাহায্যে ধ্যান করার সময় শরীরে ও মনে স্থিরতা আসে এবং মনের চিন্তা বা চিন্তাধারার হার অনেকাংশে কমে যায়।

বাহ্যিক কোন বস্তু অথবা ইন্দ্রিয়গণ থেকে আমাদের মনকে উঠিয়ে নেওয়াই হল প্রত্যাহার। এই ইন্দ্রিয়পরায়ণ জগতের সঙ্গে মনের সকল প্রকার প্রক্রিয়াকে সচেতন ভাবে বন্ধ করে দেওয়াও হল প্রত্যাহার। প্রত্যাহার আমাদের সেই ক্ষমতা দেয়, যার মাধ্যমে বাহ্যিক জগতের দ্বারা মনকে নিয়ন্ত্রিত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারি।

প্রত্যাহার বৌদ্ধিক স্তর থেকে শুরু হয়।

কোন বাহ্যিক অথবা আভ্যন্তরীণ অবস্থা বা কোন জিনিসে মনকে একাগ্র করে রাখার ক্ষমতাই হল ধারণা। কোন একক বিষয় অথবা বস্তুতে মনকে একাগ্র করে রাখাও হল ধারণা।এর সাহায্যে মন নিজে থেকেই একটি স্থির অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।

নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসকে লক্ষ করা,কোন মন্ত্র জপ করা, কোন ছবি বা বস্তু বা আলো ইত্যাদি দৃশ্যায়ন(Visualisation) করা হল ধারণার বিভিন্ন পদ্ধতি সমূহ।

ধ্যান অথবা মেডিটেশন হল একটি পদ্ধতি যার লক্ষ্য, আমাদের শরীর, মন ও বিজ্ঞানময়সত্তার মধ্যে নীরবতা নিয়ে আসা। একটি কার্যকরী শারীরিক স্থিরতা, মনের একাগ্রতা ও দৃশ্যায়ন করার ফল হল ধ্যান।

আমরা ধ্যানে যত অগ্রগতি লাভ করি ততই আমাদের মানসিক স্থিরতা আসে, আমাদের সচেতনতা সম্প্রসারিত হয় এবং আমরা আলোক প্রত্যক্ষ(Experience) করতে শুরু করি।

কার্যকরী ধ্যানের ফলই হল সমাধি।

এটি একটি পরম একতা। এটি একটি চিন্তাশূন্য অবস্থা যেখানে ধ্যান এবং যিনি ধ্যান করছেন, এই দুইয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না।

সমাধিতে আমরা দেহ, সময়, স্থান- এই সবকিছুর উপরে নিজেদের নিয়ে যেতে পারি এবং আমরা আলোতে পরিণত হই।