প্রায়শই যে প্রশ্নগুলি জানতে চাওয়া হয় (FAQs):
1. আমাদের পার্থিব দেহ ধ্যান সাধনার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
এই পৃথিবীতে আমরা আমাদের পার্থিব শরীরটি ছাড়া কোনো কিছুই করে উঠতে পারি না। একজন সাধককে দীর্ঘক্ষণ ধ্যান করতে হলে এবং সমাধির উচ্চতর অবস্থা প্রাপ্ত করতে হলে প্রথমেই তাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।
2. দীর্ঘক্ষণ ধ্যান করার জন্য কোন আসনটি সবচেয়ে উপযোগী?
পদ্মাসন এক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ। তবে, আপনি দীর্ঘক্ষণ ধ্যান করার জন্য সিদ্ধাসনেও বসতে পারেন। যদিও, নিজে যে ভাবে বসে আপনি আরাম বোধ করবেন, সেই আসনই আপনার জন্য যথোপযুক্ত।
3. কিভাবে আমি বুঝব আধ্যাত্মিক সাধনায় আমার উন্নতি ঘটছে কিনা?
এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখুন এবং নিজের মধ্যে সন্ধান করুন- নিঃশর্তভাবে আপনি কাউকে ভালোবাসতে পারছেন কিনা। আপনি মানুষের সঙ্গে কতখানি একাত্মতা অনুভব করছেন অথবা আদৌ একাত্ম হতে পারছেন কিনা, সেটিও উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন।এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে নিজের আধ্যাত্মিক সমুন্নতির পরিমাপ আপনি নিজেই করতে পারেন।
4. গুণমানসমৃদ্ধ ধ্যান (Quality Meditation) কাকে বলে?
গুণমানসমৃদ্ধ ধ্যান বলতে বোঝায়, যখন শুরুতেই একটি ধারণার উপর একমুখী হয়ে এক মিনিট অথবা দু মিনিট সম্পূর্ণ চিন্তাশূন্য অবস্থায় নিজের দেহ, মনকে নিশ্চল ও নীরব করে, সমগ্র দেহতন্ত্রের শক্তিক্ষেত্রের সঙ্গে একাত্ম হওয়া সম্ভব হয়।
5. দেব-সাক্ষাৎকার (Enlightenment) প্রাপ্তির প্রথম পদক্ষেপ কী?
ধ্যান এবং ইতিবাচককরণ।
6. আমাদের জীবনের যাবতীয় দুঃখকষ্ট কী নির্দেশ করে?
আমাদের জীবনের যাবতীয় দুঃখকষ্ট এটাই নির্দেশ করে যে, আমরা কোনো-না-কোনো কর্মফল ভোগ করছি। কর্মফল ভোগ করার মধ্যে দিয়েই প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর কর্মচিহ্নগুলি দগ্ধ করে আমাদের মধ্যে কাজ করছেন। নিয়মিত ধ্যান করলে এবং ইতিবাচককরণের অভ্যাস করলে কর্মফল ভোগান্তির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
7. গ্রহ-তারকা কিভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে?
কর্মফল আমাদেরই। গ্রহসমূহ কেবলমাত্র সেই কর্মফলকে নিয়ন্ত্রণ করে ও আমাদের তা প্রদান করে থাকে। নিষ্ঠার সঙ্গে গভীরভাবে ধ্যানসাধনার দ্বারা আমরা সমস্ত কর্মফলগুলিকে দগ্ধ করার মাধ্যমে কার্মিকচিহ্নগুলিকে দুর্বল করতে পারি, যার ফলে আমাদের জীবনে গ্রহ-তারকার প্রভাব অনেক কম পড়ে। এই কারণে আমি সর্বদা উচ্চ-গুণমানযুক্ত ধ্যান (Quality Meditation) সাধনার উপর জোর দিয়ে থাকি। গুণমান সমৃদ্ধ ধ্যানের প্রভাবে আমাদের জীবন পাল্টে যায়, জীবনরেখা বদলে যেতে পারে এবং কর্মের গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে। ধ্যানসাধনা আমাদের ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে, ইচ্ছাশক্তিকে ক্ষুরধার করে জীবনের খারাপ সময়গুলি অতিবাহিত করতে সাহায্য করে, যার ফলে আমরা কর্মের শৃঙ্খলিত বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারি।
8. নিজেকে নির্মল করে তোলার কোনো সহজ রাস্তা আছে কী?
আমার গুরুজী বলতেন যে, এটি তখনই সম্ভব যখন আমরা ধ্যানের মাধ্যমে দিব্যশক্তির অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি। আমি সেই সঙ্গে আরও যোগ করতে চাই যে, যখন আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করি, তখন আমাদের জীবনের নির্মলতা বৃদ্ধি পায়। ধ্যান করলে আমাদের দেহমনের সার্বিক পবিত্রতার অতি অবশ্যই বৃদ্ধি ঘটে।
9. কিভাবে আমরা উচ্চতর শক্তি লাভের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তুলব?
দুটি মাত্র রাস্তা আছে- ধ্যান এবং ইতিবাচককরণ।
10. ইতিবাচককরণ (Positivisation) অভ্যাস করার পথ কী ?
কিছুদিন যাবত নিজের জীবনযাপনের অভ্যাসগুলিকে লক্ষ করুন এবং এর মাধ্যমে আপনি নিজের জীবনের একটি নির্দিষ্ট ধরণকে (Pattern) অনুধাবন করতে পারবেন। দেখবেন, কোনো এক বা একাধিক সাধারণ লক্ষণ যেমন রাগ অথবা ঈর্ষা অথবা অন্য কোনো নেতিবাচক প্রবণতাই আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। এগুলির উপর কাজ করুন, এগুলি সম্পর্কে সচেতন হন, সজাগ হন এবং যাতে এই সাধারণ লক্ষণগুলি আপনার জীবনে পুনরায় ফিরে না আসে তার জন্য সচেষ্ট হন।
11. ওম্' (OM) এবং 'অউম' (AUM) এই দুই উচ্চারণের মধ্যে কী পার্থক্য?
সত্য যুগ থেকে দ্বাপর যুগ পর্যন্ত এই শব্দটি 'অউম' (AUM) রূপেই উচ্চারিত হতো। কলিযুগে উচ্চারণে বিকৃতি ঘটে। যদিও , 'ওম' (OM) উচ্চারণেও ভুল নেই। যখন আপনি 'অউম' (AUM) উচ্চারণ করেন, তখন 'অ'(A) বলতে দিব্যশক্তি/ইতিবাচক শক্তিতরঙ্গের সৃষ্টি বোঝায়, 'উ' (U) বলতে বোঝায় অর্জিত শক্তির সংরক্ষণ এবং 'ম' (M) বলতে সমগ্র দেহতন্ত্রের নেতিবাচকতার ধ্বংসপ্রাপ্তিকে বোঝায়। কিন্তু যখন 'ওম' (OM) উচ্চারিত হয়, তখন সৃষ্টিপর্বটি ঘটেনা। 'অউম' (AUM) উচ্চারণের আরেকটি সৌন্দর্য এখানেই যে একজন বোবা ব্যক্তিও এটি উচ্চারণ করতে সক্ষম। যখনই 'অউম' (AUM) উচ্চারিত হয়, তখনই আমাদের সহস্রার চক্র উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। কিন্তু, 'ওম' (OM) উচ্চারণে কেবলমাত্র পিটুইটারি গ্রন্থির উদ্দীপন ঘটে।
12. প্রাণায়াম অংশটি বাদ দিয়ে সেই সময়টিকে ধ্যানের কাজে লাগানো কী উচিত?
প্রাণায়াম সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা সঠিক পদ্ধতিতে প্রাণায়াম অভ্যাস করি, তখন আমাদের চিন্তার পরিমাণ অনেক কমে যায়। আপনি বেশি পরিমাণে ধ্যান সাধনার অভ্যাস অবশ্যই করতে পারেন, কিন্তু প্রাণায়ামের বিনিময়ে তা কখনোই করবেন না।
13. ধ্যানের অন্তিমে আশীর্বাদ দানের মাহাত্ম্য কী?
ধ্যানের অন্তিমে আপনার আধ্যাত্মিক অবস্থান অতি সূক্ষ্ম স্তরে পৌঁছে যায়। এই অবস্থায় কাউকে আশীর্বাদ দিলে তা শুভেচ্ছা, শান্তি এবং সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। আপনার উপরেও কৃপা বর্ষিত হয়। সেই সঙ্গে ধ্যানসাধনায় আপনার সদিচ্ছা বাড়তে থাকে।
14. কোন পদ্ধতি ছাড়া কি ধ্যান সাধনা করা এবং দেব-সাক্ষাৎকার (Enlightenment) লাভ করা সম্ভব?
সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, সাধন পথটিকে সহজতর করে তোলে। ধ্যানের মধ্যে দিয়ে কর্ম-দহন এবং কর্মফল থেকে মুক্ত হওয়া অনেক সহজ হয়ে ওঠে। কোন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ছাড়াও ধ্যান করা যায় কিন্তু তাতে অভীষ্ঠ লাভে অনেক দেরি হয়।
আমাদের অনুসরণ করুন
সমস্ত কোটেশন দেখতে ...